মাথা থেকে আঁশের মতো মরা চামড়া ওঠাকে খুশকি বলে। সাধারণত এই রোগটি বয়ঃসন্ধিকালে বা প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে হয়। এ ক্ষেত্রে মাথার চামড়া থেকে ছোট ছোট আঁশের মতো মরা চামড়া উঠতে থাকে। ফলে মাথার চামড়া চুলকায় এবং চিরুনি দিয়ে চুলকালে ভালো লাগে এবং চিরুনির সাথে খুশকিগুলো বেরিয়ে আসতে থাকে। তবে মাথায় যদি যৎসামান্য খুশকি হয় তা কিন্তু একটি সাধারণ ব্যাপার। এই খুশকি যদি খুব বেশি হয় তবে তাকে সেবোরিক ডার্মাটাইটিসের বহিঃপ্রকাশ বলে ধরে নিতে হবে। কিন্তু খুশকির সাথে সেবোরিক ডার্মাটাইটিসের পার্থক্য হলো এই যে, খুশকিতে মাথা থেকে আঁশযুক্ত মরা চামড়া উঠবে, তবে মাথায় কোনো প্রদাহ থাকবে না। আর যদি মাথায় খুশকি অর্থাৎ মরা আঁইশের মতো চামড়া ওঠে সেই সাথে মাথার প্রদাহও থাকে তবে তখন আমরা তাকে খুশকি নয় বরং সেবোরিক ডার্মাটাইটিস বলে চিহ্নিত করব। তবে মনে রাখতে হবে খুশকিকে সব সময় নির্মূল করা সম্ভব হয় না। কতকগুলো খুশকিকে নিবারক শ্যাম্পু দিয়ে দমিয়ে রাখা যায়। আর তাই দমিয়ে রাখাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এ কারণে যে, একে দমিয়ে না রাখলে এর থেকে মাথার চুল ঝরে যেতে থাকবে। অনেকে আবার মনে করেন খুশকি হলে মাথায় বেশি করে তেল দিতে হবে। ধারণাটা সম্পূর্ণ ভুল। কারণ এই তেল দেয়ার কারণে মাথা সব সময় তৈলাক্ত ও ভেজা থাকে। ফলে মাথায় একশ্রেণীর ছত্রাকের আক্রমণ হতে থাকে এবং এ রোগ ক্রমান্বয়ে আরো বাড়তে থাকে। আবার একশ্রেণীর রোগী এই খুশকি দমাতে মাথায় খৈল ব্যবহার করে। খৈল আর কিছুই নয়, সরিষা থেকে তেল বানাতে বর্জ্য হিসেবে এই খৈল পাওয়া যায়। এটাও একটা ভুল ধারণা। খৈল ব্যবহারে খুশকি দূর হয় বলে কোনো কথা নেই। খৈল ব্যবহারের ফলে খুশকিগুলো ভিজে মাথার ত্বকে লেগে থাকে। ফলে অনেকেরই হয়তো মনে হতে পারে যে, খুশকি দূর হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ধারণাটা সম্পূর্ণই ভুল।
যাদের মাথায় খুশকি হয় তারা মাথা ভেজা রাখবেন না, বরং মাথা যেন সব সময় পরিষ্কার থাকে তার ব্যবস্থা করতে হবে এবং ভেজা মাথায় চুল বাঁধাও উচিত নয়। তাতে চুলের নিচে পানি আটকা পড়ে ত্বক ভেজা থাকে, যা কিনা এই রোগ বাড়াতে সাহায্য করে। আর একটা কথাÑ যাদের খুশকি আছে, তাদের ব্যবহার করা চিরুনি অন্য কারো ব্যবহার করা উচিত নয়। এর মাধ্যমে খুশকিজনিত ছত্রাক একজনের মাথা থেকে অন্যের মাথায় চলে যেতে পারে। অনেক সময় সেবোরিক ডার্মাটাইটিসকে আমরা সাধারণ খুশকি বলে মনে করি। তাই মনে রাখতে হবে দেহের তেল গ্রন্থিযুক্ত স্থানে যেমন মাথার ত্বক, বুকের মধ্যখান, কানের পেছনের দিক, বগল ইত্যাদি লোমযুক্ত স্থানে যদি খোসাযুক্ত লালচে দাগ দেখা যায় সেক্ষেত্রে আমরা সিবোরিক ডার্মাটাইটিস বলে ধরে নেবো। ভুরু, নাক, নাকের পাশের খাঁজ, ঠোঁট, কান, কানের পেছন, কানের ভেতরের অংশ এসব স্থানেও এই রোগের প্রকাশ পেতে পারে। চোখের পাতাও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। যাকে বলা হয় ব্লেফাবাইটিস। এতে চোখের পাতা লালচে হয় এবং ছোট ছোট সাদা আঁশের মতো মরা চামড়া উঠতে দেখা যায়। দাড়ি, গোঁফ ইত্যাদি অংশও এতে আক্রান্ত হয়ে থাকে।
আবার অনেক সময় সেবোরিক ডার্মাটাইটিসের ওপর বাইরের জীবাণুর আক্রমণ ঘটে, সে ক্ষেত্রে দেখতে কিছুটা একমিজমার মতো মনে হয়। আর একটি রোগে প্রায়ই আঁইশ উঠতে দেখা যায়, যেটি হলো সোরিয়াসিস। মাথার সোরিয়াসিসে যখন আঁশ ওঠে তখন অনেকেই মনে করেন যে, মাথায় খুব বেশি পরিমাণে খুশকি হয়েছে। তবে এই দুটো আঁশের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে যে, সেবোরিক ডার্মাটাইটিসের আঁশগুলো তৈলাক্ত; কিন্তু সোরিয়াসিসের আঁশগুলো শুকনো ও সিলভারি রঙের বাইরে বিশেষভাবে আরো একটু লক্ষ করলে দুটোর প্রভেদ বোঝা যায়; যেমন, মাথার সোরিয়াসিসে চুলের সামনের সীমানা বরাবর একটা স্পষ্ট দাগ লক্ষ করা যায় কিন্তু খুশকি বা সেবোরিক ডার্মাটাইটিসে তেমন কোনো দাগ দেখা যায় না।
চিকিৎসা : খুশকি সেবোরিক ডার্মাটাইটিসের চিকিৎসা প্রায় একই রকম। খুশকি নিবারক শ্যাম্পু যেমন জিঙ্ক পাইরিথিওন, সেলেনিয়াম সালফাইড অথবা কেটোকোনাজল শ্যাম্পু ব্যবহারে খুশকি দমন করা সম্ভব। যদি বেশি পরিমাণ প্রদাহের লক্ষণ উপস্থিত থাকে তবে এর পাশাপাশি কম শক্তিশালী কর্টিসোন লোশন বা জেল ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
লেখক : চর্ম, এলার্জি ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আল-রাজি হাসপাতাল, ১২ ফার্মগেট, ঢাকা।
ফোন : ০১৮১৯২১৮৩৭৮ - See more at: http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/47210#sthash.xfEXUrrY.dpuf
যাদের মাথায় খুশকি হয় তারা মাথা ভেজা রাখবেন না, বরং মাথা যেন সব সময় পরিষ্কার থাকে তার ব্যবস্থা করতে হবে এবং ভেজা মাথায় চুল বাঁধাও উচিত নয়। তাতে চুলের নিচে পানি আটকা পড়ে ত্বক ভেজা থাকে, যা কিনা এই রোগ বাড়াতে সাহায্য করে। আর একটা কথাÑ যাদের খুশকি আছে, তাদের ব্যবহার করা চিরুনি অন্য কারো ব্যবহার করা উচিত নয়। এর মাধ্যমে খুশকিজনিত ছত্রাক একজনের মাথা থেকে অন্যের মাথায় চলে যেতে পারে। অনেক সময় সেবোরিক ডার্মাটাইটিসকে আমরা সাধারণ খুশকি বলে মনে করি। তাই মনে রাখতে হবে দেহের তেল গ্রন্থিযুক্ত স্থানে যেমন মাথার ত্বক, বুকের মধ্যখান, কানের পেছনের দিক, বগল ইত্যাদি লোমযুক্ত স্থানে যদি খোসাযুক্ত লালচে দাগ দেখা যায় সেক্ষেত্রে আমরা সিবোরিক ডার্মাটাইটিস বলে ধরে নেবো। ভুরু, নাক, নাকের পাশের খাঁজ, ঠোঁট, কান, কানের পেছন, কানের ভেতরের অংশ এসব স্থানেও এই রোগের প্রকাশ পেতে পারে। চোখের পাতাও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। যাকে বলা হয় ব্লেফাবাইটিস। এতে চোখের পাতা লালচে হয় এবং ছোট ছোট সাদা আঁশের মতো মরা চামড়া উঠতে দেখা যায়। দাড়ি, গোঁফ ইত্যাদি অংশও এতে আক্রান্ত হয়ে থাকে।
আবার অনেক সময় সেবোরিক ডার্মাটাইটিসের ওপর বাইরের জীবাণুর আক্রমণ ঘটে, সে ক্ষেত্রে দেখতে কিছুটা একমিজমার মতো মনে হয়। আর একটি রোগে প্রায়ই আঁইশ উঠতে দেখা যায়, যেটি হলো সোরিয়াসিস। মাথার সোরিয়াসিসে যখন আঁশ ওঠে তখন অনেকেই মনে করেন যে, মাথায় খুব বেশি পরিমাণে খুশকি হয়েছে। তবে এই দুটো আঁশের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে যে, সেবোরিক ডার্মাটাইটিসের আঁশগুলো তৈলাক্ত; কিন্তু সোরিয়াসিসের আঁশগুলো শুকনো ও সিলভারি রঙের বাইরে বিশেষভাবে আরো একটু লক্ষ করলে দুটোর প্রভেদ বোঝা যায়; যেমন, মাথার সোরিয়াসিসে চুলের সামনের সীমানা বরাবর একটা স্পষ্ট দাগ লক্ষ করা যায় কিন্তু খুশকি বা সেবোরিক ডার্মাটাইটিসে তেমন কোনো দাগ দেখা যায় না।
চিকিৎসা : খুশকি সেবোরিক ডার্মাটাইটিসের চিকিৎসা প্রায় একই রকম। খুশকি নিবারক শ্যাম্পু যেমন জিঙ্ক পাইরিথিওন, সেলেনিয়াম সালফাইড অথবা কেটোকোনাজল শ্যাম্পু ব্যবহারে খুশকি দমন করা সম্ভব। যদি বেশি পরিমাণ প্রদাহের লক্ষণ উপস্থিত থাকে তবে এর পাশাপাশি কম শক্তিশালী কর্টিসোন লোশন বা জেল ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
লেখক : চর্ম, এলার্জি ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আল-রাজি হাসপাতাল, ১২ ফার্মগেট, ঢাকা।
ফোন : ০১৮১৯২১৮৩৭৮ - See more at: http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/47210#sthash.xfEXUrrY.dpuf
0 মন্তব্য(গুলি):
Post a Comment