বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

Monday, September 15, 2014

সৌদি আরবে সোশাল মিডিয়া যেন 'খরার মাঝে বৃষ্টি'

সৌদি আরবের কোনো টেলিভিশন চ্যানেল খুললেই সেখানে ধর্মোপদেশ দিচ্ছে এমন কোনো অনুষ্ঠান দেখতে পাবেন। অনেকেই এসব নিরানন্দ অনুষ্ঠানের একঘেয়েমি থেকে বাঁচতে কম্পিউটারে ইউটিউবসহ অন্যান্য অনলাইন ব্রডকাস্টার এর দিকে ঝুঁকছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। এ বিষয়টি বিশ্বের আর কোনো দেশের প্রেক্ষিতে অবাক হওয়ার মতো না হলেও সৌদি আরবের ক্ষেত্রে বেশ বিস্ময়কর ঘটনা বটে, বলা হয় ওই প্রতিবেদনে। আর এই সংস্কৃতির উন্মেষ ঘটছে জেদ্দাসহ বিভিন্ন শহরে মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের বদৌলতে। দেশটিতে ক্রমবর্ধমান আধুনিক জনগোষ্ঠী চিত্তবিনোদনের জন্য এখন অনলাইনের দিকে ঝুঁকতে বাধ্য হচ্ছে।
সৌদির এমনই এক প্রতিষ্ঠান ইউটার্ন এন্টারটেইনমেন্ট। এখানে আসেন আলখেল্লা পরা পুরুষ আর বোরকায় ঢাকা নারীরা। তারা কাচে ঘেরা অফিসে এসে টেবিল ফুটবল খেলেন। নিজেদের ইউটিউব অ্যাকাউন্টের জন্য তারা ভিডিও করেন। এই প্রতিষ্ঠানের সদস্য সংখ্যা ৩ লাখ ছাড়িয়েছে। ইউটার্ন বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও নাটকও প্রচার করে। এসব অনুষ্ঠানে নারী-পুরুষের সম্পর্কের নানা ব্যাখ্যা ও উপদেশ দেওয়া হয়। নতুন এক জরিপে বলা হয়, সৌদির নারী-পুরুষরা প্রতিদিন ৭টি ভিডিও ইউটিউবে দেখে থাকেন।
শুধু তাই নয়, সৌদির মানুষের ৬০ শতাংশের টুইটারে অ্যাকাউন্ট রয়েছে। টুইটারের গ্রাহক সংখ্যার ভিত্তিতে এখন প্রথম স্থানে রয়েছে সৌদি আরব। ২০১২ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪৫ শতাংশ বেড়ে গেছে। এ দেশের ৩১ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে ৮ মিলিয়নের ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট রয়েছে। ই-মেইল তো রয়েছে অসংখ্য মানুষের।
গবেষণায় বলা হয়, এ দেশের তরুণ সমাজ এই পরিবর্তন আনছেন। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের অধিকাংশের বয়স ২৬ থেকে ৩৪ বছরের মধ্যে। তারা অনেক সময় নিজেদের জীবনের চাওয়া-পাওয়ার কথা নাম না প্রকাশ করে সোশাল মিডিয়ায় তুলে দিচ্ছেন। সৌদিতে সিনেমা নিষিদ্ধ হওয়ায় সোশাল মিডিয়ায় সময় কাটাতে হচ্ছে মানুষদের।
বিশেষজ্ঞরা এই পরিবর্তনকে ইতিবাচক সামাজিক পরিবর্তন বলে মনে করছেন। অবশ্য এখন পর্যন্ত সৌদির শাসকরা সোশাল মিডিয়ার এই প্রসারণকে খুব সহজে গ্রহণ করতে পারছেন না। তাদের সমাজে এখন পর্যন্ত নারীদের বাইরে যেতে বা চিকিৎসা করাতে বা লেখাপড়া করতে বাড়ির কর্তার অনুমতি নিতে হয়। এখানকার সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের ৮৭ শতাংশই পুরুষ। তবে সিরিয়ায় জিহাদি যুদ্ধের কারণে সোশাল মিডিয়ার ব্যবহার ছড়িয়েছে বলেও মনে করছেন অনেকে।
সোশাল মিডিয়ার উত্থান সৌদির সমাজের মৌলিক পরিবর্তন বলে মনে করছেন তরুণ সমাজ। রিয়াদের এক শিক্ষার্থী বলেন, শাসকরা আর কিছুই গোপন করে রাখতে পারবে না। যখন মধ্যপ্রাচ্যে এক মরণঘাতী ভাইরাস হুমকি হয়ে উঠছে, তখন শাসকরা এর সম্পর্কে নিয়মিত তথ্য প্রকাশ করতে চাইছেন না। কিন্তু টুইটার ও ফেসবুকের কল্যাণে নিয়মিত সবাই তথ্য সংগ্রহ করছেন।
এদিকে, রাজবংশে চলমান নানা ঘাত-প্রতিঘাত-সংক্রান্ত ঘটনাও আর ধামাচাপা দেওয়া যাচ্ছে না। সবই প্রকাশ হয়ে পড়ছে প্রযুক্তির কল্যাণে। তাই সমাজের পরিবর্তনের বিরুদ্ধে তারাও আর আগের মতো কঠোর নীতি গ্রহণ করতে পারছে না।
গত জুনের ২৫ তারিখে মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ফওজান আল-হারবিকে ৭ বছরের জেল দেওয়া হয় এক 'ক্ষতিকর তথ্য' প্রকাশের জন্য। দেশটিতে ২০০৭ সালে আইনের মাধ্যমে সাইবার অপরাধ বিষয়কে সংজ্ঞায়িত করা হয়। অন্যদিকে, জুনের প্রথম দিকেই নিউ ইয়র্কভিত্তিক হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়, সৌদির পূর্বাংশের সংখ্যালঘু ও সুবিধাবঞ্চিত শিয়া সম্প্রদায়ের কর্তৃপক্ষ অনলাইনে ম্যালওয়্যার ব্যবহার করছে।
যেখানে যাই ঘটুক, সৌদিতে যে সোশাল মিডিয়া মানুষের কাছে খরার বৃষ্টির হয়ে দেখা দিয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
সূত্র : বিজনেস ইনসাইডার

0 মন্তব্য(গুলি):

Post a Comment

Image

Free Updates to Email
Follow Me:
facebook twitter gplus pinterest rss
https://www.facebook.com/rubel29bd