বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

Monday, September 8, 2014

প্রতারণার নতুন কৌশল বিকাশ এবং গ্রামীণফোন


মাকে প্রতি মাসে টাকা পাঠাতে যথেষ্ট সমস্যা হচ্ছিল। গ্রামের বাড়ি থেকে পোস্ট অফিস মাইলখানেক দূরে। সমস্ত প্রচেষ্টার পরও মা তার সিদ্ধান্তে অনড়, যতদিন বাঁচবেন আপন ভিটাতেই থাকবেন। ছেলে-মেয়েরা যে যার কর্মে ব্যস্ত। তবুও তারা রুটিন করে পালাক্রমে মায়ের খোঁজ নেয়, দেখতে যায়। তারপরও সমস্যা কাটে না। মাকে প্রতি মাসে নির্ধারিত সময়ে টাকা পাঠালেও মায়ের হাতে টাকাটা নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছে না। কখনো পোস্ট মাস্টারের অবহেলা, কখনো দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সঠিক সময়ে ডাক না পৌঁছা ইত্যাদি বিঘ্ন লেগেই থাকে। এর সঙ্গে রয়েছে সাপ্তাহিক সরকারি ছুটিসহ নানান ছুটি। তাই মাকে টাকা পাঠানোর সহজ উপায় খুঁজতে গিয়ে পাওয়া গেল বিকাশ- এর খোঁজ। এই ব্যবস্থায় মাকে টাকা পাঠাতে আর সমস্যা থাকল না। যখন-তখন টাকা পাঠিয়ে দিলেই হলো। মায়ের হাতে যথাসময়ে টাকা পৌঁছে যাচ্ছে।
কিন্তু ভয়ংকর এক সমস্যা দেখা দিল। বিকাশ তাদের ব্যবসায়ের প্রসারে এর সহজলভ্যতা এমন পর্যায়ে নিয়ে গেল যে, কেউ ইচ্ছা করলেই অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে দশ টাকার বিনিময়ে। এই সহজ পদ্ধতি এখন বিনাপয়সায় গিয়ে ঠেকেছে। প্রয়োজন পড়ে না সামান্য কাগজপত্রেরও। যে কোনো এজেন্টের কাছে গিয়ে বললেই করে দেওয়া হয় বিকাশ অ্যাকাউন্ট। এর মাধ্যমে ইচ্ছেমতো করা যায় টাকা লেনদেন। কে, কোথায়, কাকে টাকা পাঠাচ্ছেন তার সামান্য তথ্যপ্রমাণও থাকছে না। কিছুদিন আগে সংবাদ মাধ্যমে দেখেছি, চোরাকারবারিরা নিরাপদে অর্থ লেনদেন করছে বিকাশের মাধ্যমে। এর সঙ্গে বর্তমানে যুক্ত হয়েছে প্রতারক চক্র। যার সামান্য দায়ভার নেয় না বিকাশ কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি গ্রামাঞ্চলে দেখা যাচ্ছে, উড়ো ফোন আসে টার্গেট করা ব্যক্তির কাছে। প্রতারক যেহেতু প্রতারক, তার বলনেও থাকে প্রতারণার নানান কৌশল। টার্গেট করা ব্যক্তিকে তারা রীতিমতো সম্মোহিত করে ফেলে। নানা প্রকার প্রলোভন দেখিয়ে বিচ্ছিন্ন করে দেয় অন্য কোনো ব্যক্তির সঙ্গে পরামর্শ করা বা কথা বলা থেকে। তাদের প্রতারণার প্রধান প্রলোভন হলো বিশ্বস্ততার সঙ্গে টার্গেট করা ব্যক্তিকে তাদের আস্থায় নিয়ে যাওয়া। এরপর বলা হয়, টার্গেট করা ব্যক্তি লটারিতে একটি গাড়ি পেয়েছেন। গাড়িটি বুঝে নিতে হলে কি কি করতে হবে তাও বলে দেওয়া হচ্ছে। বলা হয়, টার্গেট করা সম্মোহিত ব্যক্তিটি গাড়ির পরিবর্তে টাকা নিতে চাইলে সে ব্যবস্থাও করা হবে।
টার্গেট করা ব্যক্তিটিকে তাদের আস্থায় নিতে প্রতারকরা পনের থেকে বিশ হাজার টাকা অগ্রিম পাঠিয়েও দিচ্ছে বিকাশের মাধ্যমে। এ অবস্থায় টার্গেট করা ব্যক্তিটি যতক্ষণ প্রতারকদের চাহিদামতো টাকা না পাঠায় ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের নানামুখী তৎপরতা অব্যাহত থাকে। বিকাশের মাধ্যমে চাহিদামতো টাকা প্রতারকদের কাছে পাঠানোর পর যখন তারা নিশ্চিত হয় তাদের প্রতারণা সফল, সেই থেকে আর তাদের ফোনে পাওয়া যায় না। যেহেতু ওই ফোন নাম্বারটিই বিকাশ অ্যাকাউন্টের নাম্বার, তাই তারা নাম্বারটি বন্ধ করে দেয়। কিংবা ধারণা করছি, টাকাটা তুলে তারা সিমটি ধ্বংস করে ফেলে। আশ্চর্যের বিষয়, প্রতারণায় ব্যবহার করা সবগুলো নাম্বার গ্রামীণফোনের। এই ধরনের অন্তত দুটি ঘটনা আমার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের মধ্যে ঘটে গেল গত এক সপ্তাহে। এ থেকে প্রতিকারের উপায় আমার জানা নেই। এই দুই আত্মীয়ের প্রত্যেকের কাছ থেকে লাখের বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। এ নিয়ে দৈনিক পত্রিকা কিংবা টেলিভিশন চ্যানেলগুলো যদি দ্রুত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ এবং প্রচার করে তবে গ্রামের বহু মানুষ প্রতারক চক্রের হাত থেকে রক্ষা পায়। আর বিকাশ এবং গ্রামীণফোনকে কিভাবে দায়ের আওতায় আনা যায়, সে বিষয়টিতে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। বিকাশের লাগামহীন দায়িত্বহীনতা বহু মানুষকে পথে বসিয়ে দিতে শুরু করেছে। এসব প্রতারণার সঙ্গে এজেন্টরা যুক্ত কি না তাও খতিয়ে দেখা জরুরি।

0 মন্তব্য(গুলি):

Post a Comment

Image

Free Updates to Email
Follow Me:
facebook twitter gplus pinterest rss
https://www.facebook.com/rubel29bd